মৌচাষের ইতিহাস
মোহাম্মদ ইমদাদ উল বশির চৌধুরী
এমসিএসএ, এমসিআইটিপি, এমসিটিএস, এমসিপি, এলএল.বি, এম কম (হি:বি:), পিজিডি ইন সিএসই -- মৌমাছি চাষ বিষয়ে একাধিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ।
সাবেক প্রশিক্ষক, মৌমাছি পালন বিভাগ – বিসিক, হবিগঞ্জ।
প্রাচীন কাল থেকেই মৌমাছি খুবই উপকারী প্রাণী
বলে মানুষের নিকট পরিচিত। বর্তমান সময় থেকে প্রায় ৩৫২ বছর পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশে বিচ্ছিন্ন ভাবে মৌচাষ শুরু হয়। সেসময়ে ১৬৩৪ খৃঃ বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে মৌচাষ
শুরু হয় আমেরিকায়। ১৮৫০ সালের পূর্ব পর্যন্ত মৌচাষ নিয়ে বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা
চালানো সত্বেও এবিষয়ে কোন উল্লেখযোগ্য
উন্নতি সাধন সম্ভব হয়নি। আমেরিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক ও বিজ্ঞান
ভিত্তিক মৌচাষ Apiculture শুরু হয়।
সমসাময়িককালে ১৮৪০ সালে “মসেস কুইনবাই” নামক
আমেরিকার নিউইয়র্কের একজন বৈজ্ঞানিক বিজ্ঞান
সম্মত উপায়ে তৈরী মৌবাক্সের মাধ্যমে মৌচাষের কিছুটা উন্নয়ন আনেন। পরবর্তীতে ১৮৫১
সালে “ল্যাংস্ট্রথ”নামক একজন আমেরিকার
বৈজ্ঞানিক বিজ্ঞান সম্মতভাবে মৌচাষের ব্যাপক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটান। তখন থেকেই
তাঁকে মৌচাষের জনক বলা হয়ে থাকে।
আমেরিকার “রাসকা” নামক আরেকজন বৈজ্ঞানিক ১৮৬৫
সালে মধু নিষ্কাশন যন্ত্র এবং ১৮৭০ সালে “মসেস কুইনবাই” ধুয়াদানী (Smoker) তৈরী করেন। এর পরে ১৮৮৩ সালে “জন
ডকলাস” নামক কলকাতার টেলিগ্রাফ অফিসের একজন কর্মচারী ভারতবর্ষে মৌচাষ শুরু করেন। “The Hand
Book of Beekeeping” দি-হেন্ডবুক অফ বি-কিপিং নামে একটি বই তিনি ও প্রকাশ করেন। ১৯১১ সাল থেকে ১৯১৭ সাল
পর্যন্ত সময়ে “রেভড নিউটন” (Revd Newton) নামক একজন বৈজ্ঞানিক ভারতে কিছু মানুষকে মৌমাছি পালনের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান
করে মৌপালক তৈরী করেন। ঐ সময়ে তাঁর নিজের প্রবর্তিত একটি মৌবাক্সও করেন যা “নিউটন
হাইভ” নামে পরিচিত। ১৮৩৮ থেকে ১৮৩৯ সালে অল ইন্ডিয়া বি-কিপিং এসোসিয়েশন (All India
Beekeeping Association) এবং তাঁরা উক্ত সময়
থেকেই বি-জারনাল (Bee Journal)বের করেন। অতপর ভারতের মহারাষ্ট্রের পোনাতে ১৯৪৫ সালে
বি-রিসার্চ (Bee-Research) ষ্টেশন স্থাপিত হয়। এই বি-রিসার্চ ষ্টেশন বর্তমানে মৌচাষের
অগ্রগতিতে ভারত মহাদেশে অনেক সাফল্য এনেছে।
বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালের দিকে মৌচাষ শুরু করা
হলেও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। Bangladesh Small & Cottage Industries Corporation
(BSCIC) বিসিক ও অন্যান্য কয়েকটি
সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে মৌচাষের সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৭৭ সালের দিকে বিসিক, গ্রামীণ জনসাধারণকে মৌমাছি পালন বিষয়ে
প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মৌচাষ কর্মসূচী শুরু করে এবং ১৯৮০ সাল থেকে এই
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে উপজেলা পর্য্যায়ে
সম্প্রসারিত হয়েছে। বিসিক, প্রশিক্ষণ কর্মসূচী ছাড়াও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মৌপালকদের
ফলোআপ বাস্তবায়ন করছে। সমিতি গঠনের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও প্রাকৃতিক মৌ
কলোনীর উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য এবং মৌপালকগণ যাতে সুলভ মূল্যে মৌকলোনী পেতে
পারেন সেজন্য বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে দেশের বিভাগগুলোতে মৌকলোনী বিভাজন কেন্দ্র চালু
করেছে। এসকল বিভাজন কেন্দ্রে মৌকলোনী বিভাজন বা মৌকলোনী বৃদ্ধি ছাড়াও মৌমাছি নিয়ে
বিভিন্ন প্রকারের পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা করা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫০
টিরও বেশী দেশে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষ করা হচ্ছে তন্মধ্যে আমেরিকা, ইংল্যান্ড,
রাশিয়া, চীন, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইটালী, ব্রাজিল, কানাডা, মেস্কিকো,
ফ্লোরিডা, ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের নাম উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে নিয়ে
পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে উচ্চতর লেখাপড়াও হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন